গুগল ট্রান্সলেটর কিংবা যেকোন ইংরেজি অভিধান থেকে সার্চ দিয়ে পেয়ে যাবেন Loco এর মানে মূলতঃ বিকৃত-মস্তিষ্ক বা পাগল। পাগল শব্দটাকে অপমান করছি না, তবুও বলছি আমাকে পাগল না ডেকে উন্মাদ ডাকলে আমি বেশি খুশী হই। আমার উন্মাদনার এই ছোট দুনিয়ার আপনাকে স্বাগতম। আসুন পরিচিত হই।
❌সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ আপনি যদি জ্ঞানীগুণী অথবা সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী কিংবা উভয়গুনসম্পন্ন হয়ে থাকেন, আমার ব্লগে এসে আপনার সময় নষ্ট হতে পারে।
নব্বই দশকে জন্ম আমার। ঢাকার আগারগাও এ অবস্থিত শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় নামক লাল ইটের মোড়ানো এক স্বর্গ থেকে এসএসসি পাশ করি ২০১৬ সালে। এরপর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তির মাধ্যমে ফাঁকিবাজির জীবন শুরু করি কঠোর ভাবে। ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় তথাকথিতখারাপ রেজাল্ট করার মাধ্যমে এক বিশাল শিক্ষা পাই, "তথাকথিত ভালো রেজাল্ট না থাকলে নিজের আপন জনেরাও চিনে না"। শিক্ষাজীবনের বোধহয় সবে শুরু হলো। নতুবা বাংলা বইয়ে যখন লেখক পরিচিতি পড়তাম, তখন তো তাদের শিক্ষাজীবন সাল আর অর্জন মুখস্ত করতে করতেই সারাবছর পার করতাম। আর দেখেন, আমার গুলা ২/৩ লাইনেই শেষ। (পাগলের আবার অর্জন! )। ও হ্যা, বর্তমানে পড়াশোনা করছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে (ভার্সিটি পাশ করে বের হতে পারলে এই লাইনটাও বদলে দিবো)।
২০১৪ সালে, ক্লাস নাইনে বসে বড় ভাইয়ের স্যামসাং চ্যাম্প মোবাইল দিয়ে ফেসবুক খুলি। তখন একটা ট্রেন্ড ছিলো ফেসবুকে, ৬০-৭০% বাঙ্গালীই নিজের আসল নাম ব্যবহার করতো না। ডাক নামের সাথে কিছু একটা যোগ করে কুল সাজার ট্রাই করতো। যেমন ছেলেরা দিতো "সুপার বয় অমুক", "কুল বয় তমুক", "ফ্লাইয়িং অমুক" ইত্যাদি ইত্যাদি। আর মেয়েদের গুলাতো সবাই জানেনই, "এঞ্জেল অমুক","এঞ্জেল তমুক", "প্রিন্সেস অমুক" ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাববেন না যেন আমি এদের থেকে আলাদা। আমিও নিতান্তই সাধারণ মানুষরে ভাই!! আমিও কুল সাজতে নিজের নামের সাথে যোগ করার জন্য একটা ওয়ার্ড খুজা শুরু করি। ৩দিন ডিকশনারি ঘাইটা ৩টা ওয়ার্ড বের করসি আর নামগুলা সাজাইসি "এন্ড তন্ময়", "গেউডি তন্ময়", "মনে নাই তন্ময়" (আসলেই ভুলে গেছি কি বের করছিলাম তিন নম্বরটা)। পরে ভাইকে অনেক রিকুয়েস্ট করে রাজি করাই ফেসবুক একাউন্ট খোলার জন্য। যেহেতু জেএসসি তে ভালো রেজাল্ট ছিলো, আর আমি বাদে আমার ক্লাসের মোটামুটি সবারই ফেসবুক থাকার কথা বলসি, তাই ভাইকে একাউন্ট খুইলা দেয়ার ব্যাপারে রাজি করাইতে বেশি কষ্ট হয় নাই। পরে যখন বলে নাম কি দিবো, আমি অনেক ভাব নিয়া বললাম ফার্স্ট চয়েজ। ভাই বললো, "এই নামের মানে কি!!"। আমি বললাম যে তেমন মানে নাই। জাস্ট কিছু একটা। পরে ফেসবুক জানালো "এন্ড" দিয়ে কোন নামে একাউন্ট খোলা যাবে না। এরপরের নামটা যখন দেখাইলো একাউন্ট খোলা যাবে, আমি আর তৃতীয় নামের কথা বলিই নাই।
বাস শুরু হলো আমার ফেসবুক যাত্রা। কি যে মজা লাগতো তখন ভাই ফেসবুক চালাইতে। ব্লক লেটারে পোস্ট দিতাম। অনেক অনেক ফুলস্টপ আর কমা দিতাম পোস্টে। ইংলিশে পোস্ট করার ট্রাই করতাম ভাব নেয়ার জন্য। আরো কত কি!!
কিন্তু তখন আসলেই ফেসবুক মজা লাগার কিছু কারণ ছিলো। এখনকার মতো এত টক্সিক ফেসবুক তখন ছিলো না। কেন টক্সিক তা নাহয় একটা ব্লগে বলবো, কিন্তু শুধু এটাই বলি, আমি মাঝে মাঝেই ফেসবুকে লিখালিখি করতাম। ব্লগের মতো এত বড় বড় কিছু লিখতাম না। ২০০-৭০০ ওয়ার্ডের লেখা প্রায়ই লেখতাম ফেসবুকে। দিনদিন দেখলাম আপনি যত ভালোই লেখেন না কেন, কিছু মানুষ সেটাকে এমন পর্যায়ে ভাবতে শুরু করে যে আপনি অবাক হয়ে যেতে বাধ্য - কারণ ওরকম কোন ইন্টেনশনই আপনার ছিলো না। আবার ফেসবুকে লিখালিখি করলেও আমি ঠিক শান্তি পাচ্ছিলাম না। কারণ সমালোচনা হয় না এখন আর, এখন সবাই ব্যস্ত অন্যের দোষ ধরা, অন্যের লাইফ নিয়ে আলোচনা করা, ভাইরাল টপিকে সময় নষ্ট করা, মিমস নিয়ে শুধু শুধু সিরিয়াস হওয়া - এরকম আরো কিছু কাজ। আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার যে তারা ঠিক কি করবেন। ঠিক যেমন আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার এই যে আমি ফেসবুকে থাকতে আর সাচ্ছ্যন্দবোধ করছি না। না পারতে থাকছি। কিছু লেখালেখি না পাড়লেও টুকটাক লিখতে ভালোই লাগে। মনের ক্ষুদা মিটানোর ব্যাপার আছে কিছু। আবার দেখা যায় কিছু ব্যাপার নিয়ে এত এত কথা লিখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ফেসবুকে লিখলেইতো একদল এসে শুরু করবে যুদ্ধ। তাই ভাবলাম ফেসবুক বাদে অন্য কোথাও লিখালিখি করি। যখন যা ইচ্ছে করবে লিখবো। কেউ দেখুক আর না দেখুক, আমি লিখবো। যারা আমার লিখা পছন্দ করবে, তারা এমনিতেই পড়তে আসবে।
ব্লগিং ছাড়া আর কোন মাধ্যম পাচ্ছিলাম না ভালো। কিন্তু ব্লগিং এর মতো এত বড় কাজের যোগ্য আমি না। তাই ভাবলাম আস্তে আস্তে নিজের লাইফে যা ঘটে বা যা লিখতে ইচ্ছে করে, তা-ই নাহয় লিখবো, যা শিখবো, যা জানবো তা এই ব্লগের মাধ্যমে শেয়ার করে রাখবো। অনেকটা রেকর্ড রাখার মতো আর কি। আর অন্যদিকে যখন মনে করবো হ্যা, আমার লেখাগুলোকে এখন ব্লগ বলা যেতে পারে, তখন এই পেজটায় এসে শেষে একটা লাইন যোগ করে দিবো - " আজ এত সালের এত তারিখ। আজ থেকে আমি ব্লগিং শুরু করছি এই ব্লগে। এতদিন যারা আমার ছোটখাট টুকটাক লিখা পড়তেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ "।
আমার এই ব্লগ খোলার আরেকটা কারণ আছে। যা আমি শীঘ্রই একটা বই রিভিউতে বলবো। তবে এটা বলি ব্লগিং ওয়ার্ডের সাথে একান্তই যে পরিচিত নই, তাও না। আমার ভার্সিটির এক ক্লাবের এরেঞ্জ করা ব্লক রাইটিং কম্পিটিশনে ১ম রানার-আপ হই ২০২০ এর জুলাই মাসে। আমার এক বন্ধুর সাইটে একটা ব্লগ লিখে দিয়েছিলাম যেটা ছিলো প্রোগ্রামিং এর ব্যাপারে। একটা সংঘঠনের ওয়েবসাইটে কয়েকটা নিউজ রিপোর্ট লিখেছিলাম। কিন্তু এসবকিছুই আমার ভালো লাগা থেকে করেছি। ব্লগিং শিখবো বা পারবো - এই আশা নিয়ে না। আমি জানি আমি লিখালিখিতে খুবই বাজে। এতই বাজে যে লিখালিখিতে আমাকে ১০ এ হয়তো মাইনাস মার্কিং করবে সবাই। কিন্তু লিখালিখি করে আমার ভালো লাগে। জ্ঞান শেয়ার করতে ভালো লাগে। আর যেহেতু এতে আমি কারো ক্ষতি করছি না। তাই একটূ তো লিখালিখি করতেই পারি ব্লগে।
শুরুটা করেছি আপাতত এইসব কিছু কারণে। ২০২১ এর ফেব্রুয়ারীর ১৩ তারিখ আমি ব্লগার ডট কমে রেজিস্ট্রেশন করি। বলে রাখা ভালো, এই প্ল্যান ছিলো আমার ২০২০ থেকেই। কিন্তু শুধু ভেবেই যাচ্ছিলাম। এরপরে সেদিন ভাবলাম আগে ডোমেইনটা নিয়েই রাখি। নাহলে আদৌ আর কোনদিন আমার ডোমেইন নেয়া হবে কিনা জানি না। যেই ডোমেইনটা চেয়েছিলাম, সেটা পাইনি। পরে এই ডোমেইনটাই নিলাম শেষ পর্যন্ত। যদি আমি সেদিন ডোমেইনটা না নিতাম, তাইলে আমি জানি, আমি কমপক্ষে আরো ১ বছর কাটাইতাম "কিছুদিনের মধ্যেই ডোমেইন নিবো" - এইটা ভেবে ভেবে। এখান থেকে কেও যদি কিছু শিখেন, জানায়েন আমাকে। খুশী হবো। ওহ হ্যা, ১৪ আর ১৫ তারিখ গেছে আমার থিম নিয়া কাজ করতে। ভাই রে ভাই! বিশ্বাস করেন, একটা মনের মতো থিম পাই নাই কোথাও। কি জানি এই থিম কোনদিন চেঞ্জ কইরা ফালাই আবার।
শেষ কবে? সত্যি বলতে আমি চাইনা শেষ করতে। ৬ মাসে একটা হলেও আমি লিখার চেষ্টা করবো। আমি আমার লাইফে ছবি তুলা নিয়ে এত ইন্টারেস্টেড থাকি না। কোথাও ঘুরতে গেলে আমি ঘুরায় মনোযোগ দেই। যেখানে সবাই ছবি তুলে। একটা সময় গিয়ে দেখি আসলে সবার স্মৃতি থাকে, আমারই থাকে না। কিন্তু তাও আমি ছবি তুলায় মন দিতে পারি না। এইদিকে আমি ২/৩ মাস পর কাওকে যখন সেই ঘুরার গল্প শুনাইতে যাই, বেশিরভাগ মজার ঘটনাই মনে থাকে না। আবার আমি যখন নিউ কোন কিছু শিখি। আমি চাই কয়েকজনের সাথে এটা নিয়া আলোচনায় বসতে। চাই কয়েকজনকে শিখাইতে এই জিনিশটা। কিন্তু সমস্যা হইলো কাওকে পাই না তেমন। সবাই তো আর পাগলের সাথে সময় নষ্ট করতে চায় না ভাই। অন্যদিকে একটা ভালো কোন নতুন মুভি দেখলে ইচ্ছা করে এই মুভি নিয়ে এক বিস্তারিত কিছু লিখা ফেলি। শেয়ার কইরা ফেলি যা যা ভাল লাগসে এই মুভির আর কেন মানুষের এই মুভি দেখা দরকার। কিন্তু ওইযে ফেসবুকে লিখে লাভ নাই। যদিও আমি বই ওত পড়ি না, কিন্তু যেই গুলা পড়ি, মুভি দেখার মতো সেইগুলার ক্ষেত্রেও সেম অনুভূতি কাজ করে। এই সবগুলা সমস্যার সমাধান আমার কাছে মনে হলো ব্লগিং। তাই যতদিনই বাচি না কেন, চেষ্টা করবো নিজের মুভমেন্টগুলা আর নিজের করা কাজগুলার ব্যাপারে লিখে রাখতে এই ব্লগে। একটা রেকর্ডতো থাকা দরকার নাকি!!
আশা করি ৪টা পয়েন্টের উত্তর পেয়েছেন। আরো আশা করি আমার লেখার মান বুঝে গিয়েছেন। একেক পয়েন্টে একেক রকমের ভাষার সুর খেয়াল করবেন কিছুদিন। আস্তে ধীরে পরিবর্তন আসবে রে ভাই। আর আপনারা যদি না ধরায় দেন তাইলে কেমনে হবে? তাই ভালোখারাপ একটু কমেন্ট অথবা ইমেইল করে জানাবেন। খুশী হবো। আর যদিও আমি চা খাই না, কিন্তু ফিডব্যাক জানাইলে একটু নাহয় বসলাম কোনএকদিন চায়ের আড্ডায় (যদি আপনার সময় হয় তো!!)।
যা-ই হোক। পরিচিতি পর্বতে এত লেখা কেও লেখে না। ওইযে বললাম আমি উন্মাদ। তাই এত বেশি লিখলাম। আর আপনি বিশ্বাস করেন অথবা না করেন, আমি আরো ডিটেইলস লিখেছিলাম, কিন্তু বেশি বড় হয় থেকে কাটছিট করে এই পর্যন্ত আনছি। (অনেকগুলা হাহা ইমোজি)।
ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। পরবর্তী উন্মাদনার আলোচনায় অগ্রীম স্বাগতম। আর যদি কোন কিছু নিয়ে আমার উন্মাদনা বা রিভিউ জানতে চান, তাইলে জানাতে ভুলবেন না।
শেষ কথা, লেখাটা পুরাটা বাংলায় লিখার ইচ্ছা ছিলো, তাই Loco এর জায়গায় উন্মাদ শব্দটা ব্যবহার করলাম। আর উন্মাদ শব্দটায় আসলেই একটু ভাব আছে যেটা পাগল শব্দে নাই (উইথ ডিউ রিসপেক্ট টু দ্যা ওয়ার্ড পাগল)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Hello there! If you have read any of my blogs, please feel free to give me feedbacks via comments or message. This'll really help me to to improve.
Please don't share any spam via comments.